আমাদের পরবর্তী পরিকল্পনাগুলির মধ্যে শিশু
সুরক্ষা নীতি হলো সর্ব প্রথম লক্ষ্য, বিশেষভাবে শিশুদের অধিকার এবং সেটা পূর্ণ করাই
আমাদের ভবিষ্যয়ের লক্ষ্য এবং ভাবনা I যাতে শিশুরা সুন্দর ভাবে নিরাপদে বসবাস করতে পারে I
আমরা সন্দেশখালী মা সারদা ওমেন এন্ড রুরাল
ওয়েলফেয়ার সোসাইটি আমাদের কর্ম পদ্ধতির মাধ্যমে
সমাজের কাছে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই, যাতে আমাদের প্রচেষ্টা এবং সমাজের সকল স্তরের
মানুষের সহযোগিতার মাধ্যমে এই সমাজ থেকে শিশু শ্রম, শিশু পাচার, বাল্যবিবাহ এবং অন্য
কোনো শিশু নির্যাতনের মত ঘটনাকে চিরতরে মুছে ফেলতে পারি I
দারিদ্র্যতার কারণে একটি সুবিধাবাদী শ্রেণীর
(যাদের প্রতারক চক্রও বলা হয়) হাতে নিষ্পেষিত হয় সমাজের দরিদ্র মানুষ। এই প্রতারক চক্র
নানারকমের লোভ, প্রলোভন দেখিয়ে অসহায় পিতামাতাকে ভুল বোঝায়। প্রতারক চক্রটি অর্থের
বিনিময়ে দরিদ্র পিতামাতাকে বোঝায় তাদের মেয়েদের শহরে চাকরি বা যৌতুকবিহীন বিয়ের প্রস্তাব
দিয়ে সুবিধাজনক জায়গায় পাচার করে দিচ্ছে। পাচার হওয়া এসব মেয়েদের বেশিরভাগের পরিণতি
হয় অত্যন্ত করুণ। পাচার হয়ে যাওয়া এসব নারীদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন না হলেও এদের নিশ্চিত
গন্তব্য হয়ে যায় অন্ধকার জগৎ। বাকি জীবন এরা অন্ধকার জীবনের বাসিন্দা হয়ে দিনাতিপাত
করে। সাধারণত পাচারকারীদের প্রলোভনের শিকার হচ্ছে দেশের ছিন্নমূল, ভবঘুরে নারী ও শিশু,
অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, তালাকপ্রাপ্ত ও বিধবা নারীরা। মূলত প্রতারকচক্রের হাতে সুন্দরভাবে
বাঁচার প্রতিশ্রæতি পেয়ে প্রতারিত হয় এসব অসহায় নারীরা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দরিদ্র,
অশিক্ষিত মা-বাবা ভরণপোষণের দায়ভার মেটাতে না পেরে তাদের প্রিয় সন্তানকে টাকার বিনিময়ে
তুলে নেয় পাচারকারীদের হাতে। আবার কখনো কখনো পাচারকারীরা মা-বাবার অসতর্কতার সুযোগকে
কাজে লাগিয়ে তাদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করে। সা¤প্রতিক
এক গবেষণায় জানা গেছে, মূলত পাঁচটি কারণে নারী ও শিশু পাচার সংঘটিত হয়ে থাকে। কারণগুলো
হলো দারিদ্র্য, সীমান্ত অতিক্রমের সহজ প্রক্রিয়া, সমাজে মেয়েদের অবমূল্যায়ন, শিক্ষা
ও সচেতনতার অভাব এবং পিতা-মাতার অসাবধানতা ও অসতর্কতা।দারিদ্র্য, বেকারত্ম, নারীর নিম্নমানের
পেশা, চাকরি সুযোগের অভাব, মাথাপিছু নিম্ন আয়, সম্পদে নারীর অনধিকার, চাকরির ক্ষেত্রে
সমান সুযোগের অভাব নারী ও শিশু পাচারের প্রধান কারণ। দারিদ্র্য ও বেকারত্বের কারণে
দরিদ্র নারী এবং তাদের পরিবার বিয়ে ও চাকরির প্রস্তাবে প্রলুব্ধ হয়। সীমান্ত এলাকা
অতিক্রম করে এক পরিবারের সদস্যরা অন্য পরিবারের সদস্যদের সাথে যুক্ত হওয়ার বাসনা অনেক
সময় নারী ও শিশু পাচারের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে
এ প্রবণতা বেশি দেখা যায়। পরিবারে নারীর অধঃস্তন অবস্থান যা সমাজে
প্রচলিত বিভিন্ন
মূল্যবোধ, আচার-আচরণ ও সামাজিক রীতি ইত্যাদিও নারী ও শিশু পাচারকে দ্রততর করে। সমাজে
বৈবাহিক অবস্থা দিয়ে নারীর সামাজিক অবস্থান নির্ধারিত হয়ে থাকে। দরিদ্র পরিবারের পিতামাতারা
মেয়েদের জন্য আইন দ্বারা নির্ধারিত বিয়ের উপযুক্ত বয়স ১৮ বছরের কম হওয়া সত্তে
¡ও মেয়েদের বিয়ে দেওয়া দায়িত্ব বলে মনে করে
এতে করে মেয়েটি ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। প্রতারক চক্রের সদস্যরা দরিদ্র পরিবারের অপ্রাপ্ত
কন্যাকে যৌতুক ছাড়া বিয়ের প্রলোভন দেখায়। কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা এ ধরনের বিয়েতে প্রলুব্ধ
হয়ে মেয়েকে তুলে দেয় পাচারকারীদের হাতে। বিয়ে করে অপ্রাপ্ত মেয়ে অথবা নারীকে বিদেশে
নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দেয় পাচারকারীরা। কখনো কখনো যৌতুকের কারণে নারী অত্যাচার-নির্যাতনের
শিকার হয়। অত্যাচার নির্যাতনের মুখেও মেয়েটি দরিদ্র মা-বাবার ঘরে ফেরত যেতে পারে না।
মেয়েটি তখন মুক্তির উপায় খুঁজতে থাকে। আর এ রকম পরিস্থিতিকেও পাচারকারীরা সদ্ব্যবহার
করে । নারী ও শিশু পাচার সমাজে কী ফল বয়ে আনতে পারে তা নিয়ে অনেক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ
আছে। তবে নেতিবাচক প্রভাব বেশি।
নারী
ও শিশু পাচার রোধে সামাজিক সচেতনতা হলো এক মাত্র উপায়আমাদের দেশে মানব পাচার প্রতিরোধ আইন বলবত
থাকলেও পাচার রোধ হচ্ছে না, অবৈধভাবে মানুষ পাচার দিন দিন আশংকাজনক হারে বেড়ে যাচ্ছে।পাচার
রোধে বা পাচার নিয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি বা সমন্বিত উদ্যোগের অভাবই হল এর মূল অন্তরায়
I অধিক জনসংখ্যা, দরিদ্রতা, শিক্ষার অভাব, অসচেতনতা, দ্রুত নগরায়ণ, অভিবাসন, যৌন ব্যবসার
দ্রুত প্রসার, অধিক মাত্রায় ঘনঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি এশিয়াকে শিশু ও নারী পাচারের
জন্য পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে পরিণত করেছে।প্রতিবছর হাজার হাজার শিশু
ও নারী দেশের মধ্যে ও বাইরে পাচারের শিকার হচ্ছে। নারী ও শিশু পাচারের সঙ্গে মানবাধিকার
লঙ্ঘনের বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এদের মধ্যে অনেককে বাধ্যতামূলক যৌনকাজ, ভিক্ষাবৃত্তি,
চোরাচালান, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রি, কলকারখানায় ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম, পর্নোগ্রাফি, রক্ষিতা,
বাধ্যতামূলক শ্রম ইত্যাদি কাজে ব্যবহার করা হয়। তাই আমাদের প্রধান লক্ষ হল শিশু ও তার
পরিবার, বিশেষ করে পাচারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ শিশু ও তার পরিবারকে সুরক্ষা ও পাচার থেকে
রক্ষা পাওয়া শিশু ও নারীদের সমাজে পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সেই সঙ্গে শিশু পাচার ও নির্যাতনের
বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রণয়নে
সন্দেশখালী মা সারদা ওমেন এন্ড রুরাল ওয়েলফেয়ার
সোসাইটির একটি বিশেষ উদ্যোগ হলো শিশুদের কল্যাণে শিশু সুরক্ষা নীতি প্রণয়ন করা
।আমাদের সংগঠন একা এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে পারবে না তাই আপনাদের সকলকে আমাদের
সাথে থাকতে হবে যেমন আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় সরকারি-বেসরকারি এবং সমাজভিত্তিক
সংস্থা, স্কুলশিক্ষক ও কমিটি, মানবাধিকারকর্মী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সামাজিক ও
ধর্মীয় নেতারা, সাংবাদিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা, স্থানীয় প্রশাসন, স্থানীয়
সরকার এবং সর্বপরি ছাত্র সমাজ সকল কে এই অসামাজিক কাজের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে
I